আভিধানিক অর্থ : হরফ (حَرْفُ) শব্দটি একবচন, বহুবচনে الْحَرْفُ বা حُرُوفٌ; এর অর্থ হলো- পার্শ্ব, সীমানা, দ্বিধাদ্বন্দ ইত্যাদি।
পারিভাষিক সংজ্ঞা : যে শব্দ নিজের অর্থ নিজে প্রকাশ করতে পারে না; বরং অন্যের সাথে যুক্ত হয়ে নিজের অর্থ প্রকাশ করে থাকে, তাকে হরফ বলে ।
যেমন- إِلَى (প্রতি), مِنْ (হতে), فِي (মধ্যে) ইত্যাদি।
হরফ এর আলামত বা চিহ্ন :
কোনো কালিমা বা শব্দের মধ্যে যদি নিম্নোক্ত নিদর্শনাবলির কোনো একটি পাওয়া যায়, তবে তা حرف অব্যয়পদ হিসেবে পরিগণিত হবে । যথা-
১। শব্দটি مُخْبَرٌ عَنْهُ হওয়া সহীহ হবে না । অর্থাৎ, অন্য শব্দ দ্বারা হরফ সম্বন্ধে খবর দেয়া সহীহ হবে না ।
২। শব্দটি مُخْبَرٌ بِهِ তথা হরফ দ্বারাও কোনো কিছুর সংবাদ দেয়া সহীহ হবে না । অর্থাৎ, হরফ কখনো মুবতাদা, খবর, ফায়েল, নায়েবে ফায়েল ইত্যাদি হবে না।
৩। হরফ কখনো ইসম -এর চিহ্ন গ্রহণ করবে না। অর্থাৎ শব্দের সাথে حَرْفُ جَرٍّ – تَنْوِينٌ – أل ইত্যাদি ইসম -এর কোনো চিহ্ন সংযুক্ত হবে না ।
৪। হরফ কখনো ফেল এর চিহ্ন গ্রহণ করবে না । অর্থাৎ, قد – س – سوف ইত্যাদি চিহ্ন হরফে প্রবিষ্ট হবে না ।
আরও জানুন : ইসম : অর্থ, সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, আলামত ও উদাহরণ সমূহ
হরফের উপকারিতা :
আরবি ভাষায় হরফ এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেমন-
১। দু’টি ইসম-এর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা। যেমন- زَيْدٌ فِي الدَّارِ (যায়েদ বাড়িতে আছে) زَيْدٌ এবং دَارٌ উভয়টি ইসম। এই ইসম দুটোর মধ্যে فِي অব্যয়টি সম্পর্ক স্থাপন করেছে।
২। দু’টি ফেল মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা। যেমন- أُرِيدُ أَنْ تَذْهَبَ (আমি চাই, তুমি যাও )- এখানে أُرِيدُ এবং تَذْهَبَ এর মধ্যে أَنْ হরফটি সংযোগ স্থাপন করেছে।
৩। একটি ইসম ও একটি ফেল এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা। যেমন- ضَرَبْتُ بِالْخَشَبَةِ (আমি লাঠি দ্বারা মেরেছি।) এখানে ضَرَبْتُ ফেল আর الْخَشَبَةِ ইসম, ب এ হরফে জারটি উপরোক্ত ইসম ও ফেল এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে ।
৪। দু’টি বাক্যের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা। যেমন- إِنْ جَاءَنِي زَيْدٌ أُكْرِمْهُ (যদি আমার কাছে যায়েদ আসে, তবে আমি তাকে সম্মান করব।) এখানে إِنْ হরফে শর্তটি جَاءَنِي زَيْدٌ এবং أُكْرِمْهُ দুটি বাক্যের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে।
আরও জানুন : ফেল(فِعْلٌ) এর সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, আলামত ও নামকরণ
হরফ -এর নামকরণের কারণ :
হরফ (حَرْف)এর শাব্দিক অর্থ- পার্শ্ব বা কিনারা; হরফ কে হরফ নামে নামকরণের কারণ হলো, তা স্থানে ও মানে বাক্যের এক প্রান্তে অবস্থান করে। অথবা এই হরফ পদটি মুসনাদ ও মুসনাদ ইলাইহি কোনোটিই হয় না । তাই মানগত দিক দিয়ে হরফটি ইসম ও ফেলের তুলনায় প্রান্ত বা পার্শ্ব পর্যায়ে অবস্থিত। তাই একে হরফ নামে নামকরণ করা হয়েছে।
কারো মতে, হরফ অর্থ মাধ্যম; যেহেতু শব্দ মালার মাঝে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত সাধন করে পূর্ণাঙ্গ বাক্য সৃষ্টিতে মাধ্যম হিসেবে ভূমিকা পালন করে, তাই একে হরফ নামে নামকরণ করা হয়েছে।