আরবি ব্যাকরণে কালিমা (كَلِمَةٌ) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর অর্থ হলো ভাষণ, শব্দ বা বাণী। এটি মূলত একক অর্থ বুঝাবার জন্য গঠন করা হয়েছে। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো –
কালিমা (كَلِمَةٌ) আভিধানিক অর্থ :
كَلِمَةٌ শব্দটি كَلِمٌ ধাতু থেকে উদ্ভূত । যার ব্যুৎপত্তিগত অর্থ—
- আঘাত করা।
- ক্ষত করা।
- চিহ্ন করে দেওয়া ।
আর ব্যবহারিকভাবে কালিমা -এর আভিধানিক অর্থ হলো-
- ٱلْخُطْبَةُ তথা বক্তব্য বা ভাষণ ।
- ٱلْكَلاَمُ তথা বাক্য, বাণী ।
- অর্থবোধক শব্দ।
- বিধান, ইচ্ছা ।
- বা বাক্য, কথা ।
- শব্দ, পদ ।
পারিভাষিক সংজ্ঞা : মানুষের মুখনিঃসৃত অর্থবোধক প্রত্যেকটি ধ্বনিকেই কালিমা বা শব্দ বলে ।
আরও জানো : ইসম : অর্থ, সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, আলামত ও উদাহরণ সমূহ
কালিমা এর প্রকারভেদ:
কালিমা তিন প্রকার । যথা-
১। ٱلِاسْمُ (বিশেষ্য)।
২। ٱلْفِعْلُ (ক্রিয়া)।
৩। ٱلْحَرْفُ (অব্যয়) ।
১। ٱلِاسْمُ (বিশেষ্য) :
আভিধানিক অর্থ : ٱلِاسْمُ শব্দটি একবচন, বহুবচনে ٱلْأَسْمَاءُ . এর অর্থ হলো আলামত, চিহ্ন বা নিদর্শণ।
পারিভাষিক সংজ্ঞা : যে কালিমা বা শব্দ তিন কালের এক কালের সাথে মিলিত না হয়েই নিজের অর্থ নিজে প্রকাশ করতে পারে তাকে ইসম (ٱلِاسْمُ )বলে । আর তিনকাল হলো- অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ-কে বোঝায় ।
উদাহরণ : مَرِيَةٌ (মারিয়া-একটি মেয়ের নাম), طَلْحَةٌ (তালহা-একটি ছেলের নাম), بَطُّو خَالٍي(পটুয়াখালী- একটি স্থানের নাম) ।
২। ٱلْفِعْلُ (ক্রিয়া):
আভিধানিক অর্থ : ٱلْفِعْلُ শব্দটি বাবে فَتَحَ-এর মাসদার । এর অর্থ হলো কাজ, কর্ম, কার্য, ক্রিয়া, ইংরেজীতে Verb সম্পাদন করা বোঝায় ।
পারিভাষিক সংজ্ঞা : যে শব্দ নিজেই নিজ অর্থ প্রকাশ করতে পারে এবং তিনটি কালের যে কোনো একটির সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকে তাকে ফেল (ٱلْفِعْلُ ) বলা হয় ।
উদাহরণ : نَصَرَ (সে সাহায্য করেছে), يَأْكُلُ (সে খাচ্ছে বা খাবে)।
আরও জানুন : ফেল(فِعْلٌ) এর সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, আলামত ও নামকরণ
৩। ٱلْحَرْفُ (অব্যয়) :
আভিধানিক অর্থ : حَرْفُ শব্দটি একবচন, বহুবচনে أَحْرُفُ বা حُرُوفٌ; এর অর্থ হলো- পার্শ্ব, সীমানা, দ্বিধাদ্বন্দ্ব ইত্যাদি ।
পারিভাষিক সংজ্ঞা : যে শব্দ নিজের অর্থ নিজে প্রকাশ করতে পারে না; বরং অন্যের সাথে যুক্ত হয়ে নিজের অর্থ প্রকাশ করে থাকে, তাকে হরফ বলে ।
উদাহরণ : إِلَى (প্রতি), مَنْ (হতে), فِي (মধ্যে) ইত্যাদি ।
আরও জানুন : হরফ (حَرْف) এর : সংজ্ঞা, আলামত, উপকারিতা ও নামকরণ
কালিমা এ তিন প্রকারে সীমাবদ্ধ হওয়ার কারণ:
কালিমা কে তিন প্রকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ করার কারণ হচ্ছে- কালিমা দুটো অবস্থার এক অবস্থা থেকে মুক্ত নয় । যথা-
১. হয়ত তা অন্যের সহযোগিতা ছাড়া নিজের অর্থ প্রকাশ করতে পারবে না। তখন একে বলা হয় হরফ বা অব্যয়। যেমন- এ হতে । إِلَى (প্রতি), مَنْ (হতে) ইত্যাদি ।
২. অথবা নিজেই নিজের অর্থ প্রকাশ করতে পারবে। যদি পদটি নিজেই নিজের অর্থ প্রকাশ করতে পারে, তবে তাও দুটো অবস্থার এক অবস্থা হতে মুক্ত নয়। যথা-
ক. হয়ত তার অর্থ তিন কাল (অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত) এর কোনো এক কালের সাথে সম্পৃক্ত হবে, একে বলা হয় ফেল বা ক্রিয়া, যেমন- كَتَبَ(সে লিখল), এখানে লেখার কাজ অতীত কালে হয়েছে।
(খ) অথবা তার অর্থ কোনো কালের সাথে সম্পৃক্ত হবে না । তখন একে বলা হয় ইসম বা বিশেষ্য। যেমন- قَلَمٌ (একটি কলম), زَيْدٌ(যায়েদ) ইত্যাদি
যেহেতু আরবী ভাষায় এ তিন প্রকার কালিমা এর বাইরে অন্য কোন প্রকার কালিমা বা শব্দ হতে পারে না, তাই কালিমা এ তিন প্রকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ । এ দলিলটিকে সীমাবদ্ধ হওয়া বলে।