আমরা জানি কালিমা ৩ প্রকার। যথা- ইসম, ফেল এবং হরফ। ইসম (ٱلِاسْمُ) এমন একটি কালিমা যা তিন কালের অর্থাৎ অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত কোনো কালের সাথে মিলিত না হয়ে নিজের অর্থ বুঝায়। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো –
ইসম অর্থ কি ও কাকে বলে ?
আভিধানিক অর্থ : ইসম (اِسْمٌ) শব্দটি سُمُوٌّ ক্রিয়ামূল হতে নির্গত। এর অর্থ হলো- উন্নত হওয়া, উঁচু হওয়া। অথবা وَسْمٌ ক্রিয়ামূল হতে নির্গত। যার অর্থ – আলামত বা চিহ্ন।
পারিভাষিক সংজ্ঞা : যে শব্দ অন্য কোন পদের সাথে মিলিত না হয়ে নিজেই নিজের অর্থ প্রকাশ করতে পারে এবং তিন কাল তথা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত এর মধ্যে কোন কালও তার মধ্যে পাওয়া যায় না তাকে ইসম বলা হয় । যেমন-زَيْدٌ (কোন এক নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম), رَجُلٌ (একজন পুরুষ), عِلْمٌ (বিদ্যা বা জ্ঞান) ।
আরও জানুন : ফেল(فِعْلٌ) এর সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, আলামত ও নামকরণ
ইসম( اِسْمٌ)-এর প্রকারভেদ :
ইসম প্রধানত তিন প্রকার । যথা-
১। ইসমে জামেদ ( ٱلِاسْمُ ٱلْجَامِدُ) তথা নিরেট বিশেষ্য।
২। ইসমে মাসদার (ٱلِاسْمُ ٱلْمَصْدَرُ) তথা ক্রিয়ামূল বিশেষ্য।
৩। ইসমে মুশতাক (ٱلِاسْمُ ٱلْمُشْتَقُّ ) তথা উৎপন্ন বিশেষ্য।
১। ইসমে জামেদ ( ٱلِاسْمُ ٱلْجَامِدُ) :
জামেদ (جَامِدُ) শব্দের অর্থ- কঠিন, মৌল বা আদি। যে ইসম অন্য কোন শব্দ থেকে গঠিত নয়, তাকে ইসমে জামেদ বলা হয়।
যেমন : رَأْسٌ (মাথা ), بَيْتٌ (ঘর), قَلَمٌ (কলম ), رَجُلٌ (পুরুষ )।
ইসমে জামেদ আবার দু’প্রকার । যথা-
ক। ইসমে জাত (اِسْمُ ٱلذَّاتِ) : ইসমে জাত এমন ইসমে জামেদ কে বলে যার অস্তিত্ব বা অবয়ব আছে। যেমন : إِ مْرَأَةٌ (নারী), نَمِرٌ (বাঘ), حَيَّانُ(দয়াশীল ) ইত্যাদি।
খ। ইসমে মা‘না (اِسْمُ ٱلْمَعْنَى): ইসমে মা‘না এমন ইসমে জামেদ কে বলে, যার অস্তিত্ব বা অবয়ব নেই। যেমন : ٱلْحَقُّ (সত্য), مَعْرِفَةٌ ( জ্ঞান) ইত্যাদি।
আরও জানুন : হরফ (حَرْف) এর : সংজ্ঞা, আলামত, উপকারিতা ও নামকরণ
২। ইসমে মাসদার (ٱلِاسْمُ ٱلْمَصْدَرُ) :
মাসদার শব্দের অর্থ- মূল, উৎস। পরিভাষায় যে ইসম দ্বারা কোন কাজ করা বা হওয়া বোঝায়, তবে তা নির্দিষ্ট কালের সাথে সম্পৃক্ত নয়, তাকে ইসমে মাসদার বলে বলে ।
যেমন- ٱلضَّرْبُ (প্রহার করা ), ٱلذَّهَابُ (যাওয়া), ٱلنَّصْرُ (সাহায্য করা), ٱلْقُرْبُ (নিকটবর্তী হওয়া) ।
৩। ইসমে মুশতাক (ٱلِاسْمُ ٱلْمُشْتَقُّ ) :
ইসমে মুশতাক শব্দের অর্থ- উৎপন্ন বা গঠিত। পরিভাষায় যে ইসম অন্য কোন শব্দ থেকে গঠিত, তাকে ইসমে মুশতাক বলা হয়।
যেমন- ٱلنَّصْرُ থেকে نَاصِرٌ (সাহায্যকারী), ٱلضَّرْبُ থেকে مُضْرُوبٌ (প্রহৃত) ইত্যাদি ।
ইসমে মুশতাক (ٱلِاسْمُ ٱلْمُشْتَقُّ ) আবার ছয় প্রকার । যথা-
১। اِسْمُ ٱلْفَاعِلِ তথা কর্তৃবাচক বিশেষ্য।
২। اِسْمُ ٱلْمَفْعُولِ তথা কর্মবাচক বিশেষ্য।
৩। اِسْمُ ٱلتَّفْضِيلِ তথা তুলনাজ্ঞাপক বিশেষ্য ।
৪। اِسْمُ ٱلآلَهِ তথা যন্ত্রবাচক বিশেষ্য।
৫। اِسْمُ ٱلظَّرْفِ তথা স্থান/কালবাচক বিশেষ্য।
৬। اِلصِّفَةُ ٱلْمُشَبَّهَةُ তথা স্থায়ী গুনবাচক বিশেষ্য।
আরও জানুন : কালিমা কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি উদাহরণ সহ
ইসম এর আলামাত সমূহ :
১। مَحْكُومٌ عَلَيْهِ হওয়া : অর্থাৎ বাক্যের উদ্দেশ্য হওয়া। উদ্দেশ্য হলো, যার সম্পর্কে কোন কিছু বলা হয়। যেমন—যায়েদ দণ্ডায়মান, এখানে যায়েদ সম্পর্কে বলা হয়েছে। সুতরাং যায়েদ হচ্ছে ইসম। এক কথায় ফায়েল,নায়েবে ফায়েল বা মুবতাদা হওয়ার স্থানে পতিত হওয়া ইসম এর আলামত।
২। মুদাফ বা সম্পন্ধ পদ হওয়া : যাকে সম্বন্ধ করা হয় তাকে মুদাফ বলে। আর যার সাথে সম্বন্ধ করা হয়, তাকে মুদাফ ইলাইহি বলে। যেমন- যায়েদের গোলাম। এখানে গোলামের সম্বন্ধ করা হয়েছে যায়েদের সাথে, সুতরাং গোলাম শব্দটি মুদাফ আর যায়েদ শব্দটি মুদাফ ইলাইহি।
৩। শব্দটির পূর্বে ال প্রবিষ্ট হওয়া । যেমন- ٱلْقُرْآنُ كِتَابُ ٱللَّهِ। (আল কুরআন আল্লাহর বাণী) ।
৪। শব্দটি مَجْرُورٌ হওয়া। যেমন আল্লাহ তা’আলার বাণী- هُدًى لِلْمُتَّقِينَ (মুত্তাকিদের জন্য পথ প্রদর্শক) এখানে مُتَّقِينَ শব্দটি مَجْرُورٌ কেননা এটি ل হরফে যারের পরে হয়েছে । তাই এটি ইসম।
৫। শব্দের শেষে তানভীন হওয়া। যেমন- جَاءَنِي عَالِمٌ (আমার নিকট একজন জ্ঞানী আসল) ।
৬। শব্দটি দ্বিবচন হওয়া । যেমন- رَجُلَانِ (দু’জন পুরুষ), قَلَمَانِ (দু’টি কলম), مُسْلِمَانِ (দু’জন মুসলমান) ।
৭। বহুবচন হওয়া । যেমন-رِجَالٌ (লোক সকল), رُسُلٌ (রাসূলগণ), أَقْلَامٌ(কলমগুলো) ।
৮। শব্দটি গুণবাচক হওয়া। যেমন- সৎ লোক।
৯। শব্দটি ক্ষুদ্রার্থ প্রকাশক হওয়া । যেমন- زَيْدٌ عُبَيْدٌ (যায়েদ একজন ক্ষুদ্র ও নগণ্য দাস)।
১০। শব্দটি মুনাদা হওয়ার যোগ্য হওয়া । যেমন- يَا طَلْحَةُ (হে তালহা) ।
উল্লেখিত আলামত ছাড়াও -ইসম এর আরো কতিপয় আলামত রয়েছে । যা নিম্নরূপ-
১১। শব্দটি منسوب তথা সম্বন্ধকৃত হবে । যেমন- بَنْغْلَادِيشُ
১২। শব্দটি عدد তথা সংখ্যাবাচক হবে। যেমন- عِشْرُونَ
১৩। শব্দটি স্থানের অর্থবোধক হবে। যেমন- مُصَلّى
১৪। শব্দটি সময়কালের অর্থজ্ঞাপক হবে। যেমন-شَهْرٌ- سَاعَةٌ – يَوْمٌ
১৫। শব্দটি পরিমাপক যন্ত্রের অর্থজ্ঞাপক হবে । যেমন- مِيزَانٌ
১৬। শব্দটির শেষে গোল তা (ة ) যুক্ত হবে । যেমন- مَدْرَسَةٌ
১৭। শব্দটি غَيْرُ مَنْصَرِفٍ হবে। যেমন- إِبْرَاهِيمُ
১৮। শব্দটি جامد তথা মৌলিক অর্থে ব্যবহার হবে । যেমন-فرس
কোনো শব্দের মধ্যে উপরোল্লিখিত আলামতের মধ্য হতে যে কোনো একটি আলামত পাওয়া গেলে তা ইসম হিসেবে গণ্য হবে ।