বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য - রচনা : ২০ পয়েন্ট

(toc) Table Of Contens

উপস্থাপনা : 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্য দিয়ে একটি দেশের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও রূপ ফুটে ওঠে। বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি দেশে দেশে বিভিন্ন রূপে প্রতীয়মান হয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করে। আমাদের বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এক অপূর্ব লীলানিকেতন। সুজলা-সুফলা, শস্য- শ্যামলা, সৌন্দর্যে ভরা আমাদের এই দেশ। লীলাময়ী প্রকৃতি এদেশে যেন মুক্তহস্তে তার সমস্ত সৌন্দর্য বিতরণ করেছে।

বাংলাদেশের রূপের বর্ণনা : 

শস্য-শ্যামল অবারিত মাঠ, সুনীল আকাশ হৃদয়কে আনন্দ দান করে । সারি সারি নারিকেল গাছ, সুপারির বাগান সব মিলিয়ে বিধাতা যেন তিল তিল করে রূপ-লাবণ্যের ছটায় বাংলাকে অপরূপ সাজে সাজিয়েছেন।

বাংলাদেশের ভূ-সৌন্দর্য :

বাংলাদেশের ভূ-ভাগ কোমল সরস পললময় মাটিতে গড়া । পাহাড়ি ও উঁচু অঞ্চল আবার সুকঠিন শিলাময় লাল মাটির আবরণে ঢাকা ।

বাংলাদেশের নদ-নদী : 

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনাসহ অসংখ্য নদ-নদী বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে বহুগুণ বৃদ্ধি করে দিয়েছে। এ সব নদ-নদী বাংলার ভূ-ভাগে মানবদেহের রক্তের বেগ সদৃশ ।

আরও পড়ুন : বাংলা রচনা - বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্র্য  [ Class 6, 7, 8. 9, 10 ] 

নদ-নদীর সৌন্দর্য : 

বাংলাদেশে নদ-নদীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এদেশের নাম হয়েছে নদীমাতৃক দেশ। অসংখ্য নদীর জন্যে বাংলাদেশের প্রকৃতি সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়ে উঠেছে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, শীতলক্ষ্যা, কর্ণফুলি, সুরমা প্রভৃতি নদী জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে। 

এদেশের বুকের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এসব নদী মাটিকে উর্বর করে শস্য-শ্যামল করে তুলেছে, প্রকৃতিকে করেছে বৈচিত্র্যময়। নদীর জলধারার প্রভাবে সবুজের সমারোহ এসেছে। নদীর বুকে বয়ে চলা নৌকা, লঞ্চ, স্টিমারগুলো এক অপূর্ব সৌন্দর্য সৃষ্টি করে।

বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি : 

ভূ-প্রকৃতির দিক থেকে বাংলাদেশ রূপ-বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ। এদেশের মাটিতে সোনাঝরা ফসল ফলে। কিছু কিছু অঞ্চল জুড়ে পার্বত্যভূমি থাকলেও দেশের অধিকাংশ অঞ্চল সমভূমি। সমতল ভূমির মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্রের মতো বিখ্যাত নদী। অসংখ্য নদীনালা দেশটিকে জালের মতো ঘিরে রেখেছে। এজন্য প্রকৃতি বিজ্ঞানীরা এদেশকে নদীমাতৃক দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

বাংলাদেশের জলবায়ু : 

বাংলাদেশের আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ। প্রবল উষ্ণতা কিংবা শৈত্যের প্রভাব এখানে নেই। গ্রীষ্মকালে উত্তর-পশ্চিম কোণ থেকে কালবৈশাখী ঝড় প্রবাহিত হয়। এ সময় কিছুটা সূর্যতাপের প্রখরতা লক্ষ্য করা যায়। অনেক সময় প্রকৃতি রুক্ষ ও শুষ্ক আকার ধারণ করে। 

বর্ষাকালে প্রবল বারি বর্ষণের ফলে গরমের প্রকোপ কিছুটা কমে আসে। শরৎ ও হেমন্তের জলবায়ু শান্ত প্রকৃতির। শীতের জলবায়ু কিছুটা আর্দ্র। তার পরে আসে বসন্ত। এ সময় মনোমুগ্ধকর দক্ষিণা হাওয়া এদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

বহুমাত্রিক প্রকৃতি : 

টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট্ট এই দেশটি বিশ্বের দরবারে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি হিসেবে পরিচিত। এ সৌন্দর্য যেমন দেশের ভূ-প্রকৃতি গঠনের দিক থেকে, তেমনই ঋতুবৈচিত্র্যের দিক থেকেও । দেশের দক্ষিণে বিশাল বঙ্গোপসাগরের উত্তাল প্রতিধ্বনি নিয়তই এক অলৌকিক সুরের মায়াজাল সৃষ্টি করেছে। হাজার হাজার মানুষ সেই সুরের মোহে ছুটে যায় সমুদ্র সৈকতে। 

উত্তরের ধূসর প্রকৃতির উদাসীনতার বাণী বাউলের মতো মানুষকে ঘরছাড়া করে। অসংখ্য নদ- নদী জালের মতো সারাদেশে ছেয়ে রয়েছে। কলকল রবে এসব নদ- নদী সাগরের পানে ছুটে চলছে প্রতিনিয়ত। এদেশের অনুচ্চ পাহাড়, বন-বনানিগুলো যেন ঘোমটা মাথায় দিয়ে ধ্যানে বসেছে। আর এটাই আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ। এ নিয়েই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গঠন । এভাবে আমাদের দেশের ছোট পরিধিতে প্রকাশ পেয়েছে প্রাকৃতিক রূপের লীলাখেলা ।

আরও পড়ুন :- বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প - রচনা class 6 , 7 , 8 , 9, ssc, hsc - PDF

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বনাঞ্চল ও পাহাড় : 

অপূর্ব সৌন্দর্যে বিভূষিত ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যময় গাঙ্গেয় অববাহিকার সাগর তীরে জেগে ওঠা উর্বর পলিমাটি সমৃদ্ধ এদেশের মাটিতে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য বনাঞ্চল ৷ বিশ্বজুড়ে রয়েছে এদেশের সুন্দরবনের নাম। এখানকার বিশাল বনানীতে সৃষ্টি হয়েছে এক স্বতন্ত্র জীবনধারা। এখানকার বিচিত্র জীব-জন্তু মানুষকে যেমন আকৃষ্ট করে তেমনই মনে ভীতিরও সঞ্চার করে। 

বিশ্ববিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও চিত্রল হরিণ ছাড়াও সুন্দরবনে রয়েছে অসংখ্য জীবজন্তু। সুন্দরবন ছাড়াও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে আকর্ষণীয় হয়ে রয়েছে ভাওয়াল ও মধুপুর গড়ের বনাঞ্চল। পার্বত্য চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, সিলেট, বান্দরবানের বনাঞ্চলের সঙ্গে পাহাড় এবং পাহাড় ঘেঁষে বয়ে যাওয়া নদীগুলো এদেশে এক বিচিত্র সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে।

গ্রামের দৃশ্য : 

এদেশের এক একটি গ্রাম যেন প্রকৃতির এক একটা লীলানিকেতন। গ্রামের যে দিকেই তাকানো হয় সেখানেই দেখা যায় শস্য-শ্যামল ক্ষেত, ফুলে-ফলে ভরা গাছপালা, অর্থাৎ চারদিকেই সবুজের সমারোহ । প্রকৃতির সবুজ অবগুণ্ঠনের মধ্য থেকে পাকা শস্যের মুখখানি যেন স্বর্ণবিন্দুর মতো উঁকি দিয়ে ওঠে। 

কুটির ঘেরা পল্লিগ্রাম, সবুজ-শ্যামল মাঠ, দীঘির জলে খেলা করা হাঁস সব মিলিয়ে পল্লিতে প্রকৃতির এক অপূর্ব সৌন্দর্য বিরাজ করে। তাই বিশ্বকবি বলেছেন— 'গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙ্গা মাটির পথ আমার মন ভুলায় রে।'

ঋতুবৈচিত্র্যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য : 

বারো মাসে ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ । ছয়টি ঋতু এক এক বৈচিত্র্য, সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয়। গ্রীষ্ম, বর্ষা শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত ঋতু চক্রাকারে আবর্তিত হয়ে পরিবর্তন ঘটায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রূপ। গ্রীষ্মে প্রচণ্ড দাবদাহে প্রকৃতি অতিষ্ঠ হয়ে ধারণ করে রুদ্রমূর্তি ।
 
চারিদিকে থৈ থৈ পানি নিয়ে আসে বর্ষা, শরৎ আসে মেঘমুক্ত আকাশ ও অপরূপ জ্যোৎস্না নিয়ে। হেমন্তে শস্যক্ষেত্রের পাকা ফসলে প্রকৃতি এক অপরূপ সৌন্দর্য লাভ করে। আর শীত প্রকৃতিকে রিক্ত, নিঃস্ব করে হাজির হয় কুয়াশার চাদর নিয়ে ।

বাংলাদেশের আবহাওয়া : 

নাতিশীতোষ্ণ কোমল আবহাওয়ায় গড়া আমাদের বাংলাদেশের জলবায়ু। উষ্ণতা বা প্রখরতা অথবা শৈত্য এখানে কোনটাই চরমভাবাপন্ন নয় ।

ঋতু পরিক্রমায় বাং দেশের শোভা :

ঋতু পরিবর্তনের ধারা বাংলাদেশকে অপার সৌন্দর্যে বিভূষিত করে রেখেছে। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্ত চক্রাকারে আবর্তিত হচ্ছে। আর এ ছ'টি ঋতু অপরূপ রূপে, বর্ণে, গন্ধে, আনন্দে বিচিত্র করে তোলে গোটা পরিবেশকে।

আরও পড়ুন :- বাংলা প্রবন্ধ রচনা : বৃক্ষরোপণ অভিযান

গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশ : 

বছরের শুরুতে কালবৈশাখীর রুদ্র রূপ নিয়ে আসে গ্রীষ্ম। গ্রীষ্মে প্রখর সূর্যতাপে তরুলতা, মাঠ-ঘাট বিবর্ণ হয়ে যায় । এ দুঃসহতার মাঝে আম, কাঁঠাল, লিচু প্রভৃতি রসাল ফল যোগান দেয় । এসব ফল যেন প্রকৃতির স্নিগ্ধ উপহার ।

বর্ষাকালে বাংলাদেশ : 

গ্রীষ্মের নিদাঘ নির্যাতনে ধরণী যখন হাঁপিয়ে ওঠে, তখন বর্ষা আসে তার সীমাহীন জলের সম্ভার নিয়ে । তপ্ত মাটির বুকে রসধারা সঞ্চার করে তাকে সবুজে সাজিয়ে তোলে । নদী-নালা, খাল-বিল পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়।

শরৎকালে বাংলাদেশ : 

বর্ষার শেষে শরৎ আসে রানির সাজে। শরৎ বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর, স্নিগ্ধ ও মধুর ঋতু। তাই কবি বলেন, 'আজিকে তোমার মধুর সুরভি হেরিনু শারদ প্রভাতে।'

হেমন্তকালে বাংলাদেশ : 

হেমন্তকাল আসে শস্যভরা ডালি নিয়ে । হেমন্তী ফসলের মিষ্টি গন্ধ মন-প্রাণ আকুল করে তোলে । হেমন্তকালে বাতাসে থাকে একটু হিমেল পরশ । তখন বিচিত্র ফলের সমাহার ও পাকা ধানের মনমাতানো গন্ধে মন ভরে যায় ।

শীতকালে বাংলাদেশ : 

হেমন্তের হিমেল হাওয়ায় শীতের যে পদধ্বনি শোনা গিয়েছিলো, ঋতুর আগমনে ভোরের শিশির আর শৈত্যপ্রবাহে তার স্বরূপ প্রকাশ পায়। শীতে প্রকৃতি রিক্ত হয়ে ওঠে। তবে শরতের টাটকা শাক-সবজি, খেজুর রসের পায়েস মানুষের মনে খুশির জোয়ার আনে।

বসন্তকালে বাংলাদেশ : 

শীতের শেষে আসে বসন্ত ঋতু। জরাজীর্ণ শুষ্ক শীর্ণতা বিদায় নিয়ে যৌবনের প্রতীক ঋতুরাজ বসন্ত ফুলসাজে আগমন করে । জানা-অজানা হাজারো ফুলের সুবাসে হৃদয়ে শিহরণ জাগে ।

উপসংহার: 

প্রকৃতি ও মানুষের জীবনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মধ্যেই দেশের প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সৌন্দর্যপ্রেমী মানুষকে করেছে ঘরছাড়া। এদেশের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বিভিন্ন পর্যটক ছুটে এসেছেন দেশ-বিদেশ থেকে। কাজেই বাংলাদেশকে প্রকৃতির সুরম্য লীলানিকেতন বললেও ভুল হবে না ।

Post a Comment

0 Comments