ইলমে ফিকহ ইসলামী শরীয়তের মূলনীতি কুরআন ও হাদীসের সারবত্তা রূপ। ইসলামী জীবনব্যবস্থার প্রতিটি বাঁকে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে ইলমে ফিকহের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তাছাড়া ইসলামী সমাজ গঠনেও এর অবদান অসামান্য। তাই ইলমে ফিকহের জ্ঞানার্জনের বিকল্প নেই । নিম্নে প্রশ্নালোকে ফিকহ শব্দের অর্থ কি? ফিকহ কাকে বলে। ফিকহ এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো ।
ফিকহ শব্দের আভিধানিক অর্থ :
- اَلْفَهْمُ وَالْفِطْنَةُ তথা বোঝা বা হৃদয়ঙ্গম করা।
- حُصُولُ ٱلْمَهَارَةِ তথা পাণ্ডিত্য অর্জন করা।
- ٱلشُّعُورُ তথা উপলব্ধি করা।
- ٱلْفَهْمُ তথা অনুধাবন করা, বোঝা।
- ٱلْفَطَانَةُ তথা সূক্ষ্মদর্শিতা।
- ٱلْعِلْمُ তথা জানা।
- ٱلْكَشْفُ وَٱلْإِظْهَارُ তথা উন্মুক্ত করা।
- ٱلْإِحْسَاسُ তথা অনুভব করা।
- ٱلْإِدْرَاكُ তথা অবগত হওয়া।
- ٱلتَّعَقُّلُ তথা হৃদয়ঙ্গম করা।
- ٱلتَّفَهُّمُ তথা বোধগম্য হওয়া।
- ٱلشَّقُّ তথা বিদীর্ণ করা।
- ইংরেজিতে বলা হয়- Comprehend, Understand, To acquire vast knowledge ইত্যাদি
ফিকহ এর পারিভাষিক সংজ্ঞা :
ইসলামি শরিয়তের মূল উৎস সমূহ তথা কুরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াসের আলোকে শরিয়তের বিধি-বিধান অবগত হওয়াকে ফিকহ বলে।
আরো পড়ুন : ফিকহ শাস্ত্রের উৎস কয়টি? ফিকহ এর আলোচ্য বিষয় ও উদ্দেশ্য কি
ফিকহ এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা :
ফিকহ এর গুরুত্ব :
ইসলামি জীবনব্যবস্থায় ফিকহশাস্ত্রেরগুরুত্ব অপরিসীম। কেননা ইসলামের মূল উৎস কুরআন ও হাদিস যথাযথভাবে অনুধাবন এবং সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে হলে ফিকহশাস্ত্রের বিকল্প নেই। মহান আল্লাহ ফিকহ বা দীনি জ্ঞান অর্জনের প্রতি অত্যন্ত তাগিদ দিয়েছেন। এ শাস্ত্র শিক্ষার গুরুত্বসম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে অনেক বর্ণনা এসেছে। যেমন:
১. আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- তাদের প্রত্যেক দলের একটিঅংশ কেন বের হয় না, যাতে তারা দীন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনকরতে পারে এবং তাদের সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে এসে তাদেরকে সতর্ক করতে পারে, যাতে তারা সতর্ক হয়।
২. নবি করিম (স) ইরশাদ করেছেন- لِكُلِّ شَيْءٍ عِمَادٌ وَعِمَادُ هَذَا الدِّينِ الْفِقْهُ . অর্থাৎ, প্রত্যেক বস্তুর খুঁটি রয়েছে। আর এ দীন তথা ইসলামের খুঁটি হলো আল ফিকহ।
৩. নবি করিম (স) আরো বলেছেন- فَقِيهُ وَاحِدٌ أَشَدَّ عَلَى الشَّيْطَانِ مِنْ الْفِ عَائِدٍ . অর্থাৎ, শয়তানের মুকাবিলায় একজন ফকিহ হাজার আবিদ হতেও শক্তিশালী।
ফিকহ এর এর প্রয়োজনীয়তা :
কুরআন হাদিস থেকে শরিয়তের বিধানাবলি সরাসরি খুঁজে বের করা কষ্টসাধ্য। এক্ষেত্রে ফিকহশাস্ত্র অনন্য ভূমিকা পালন করে। ইলমুল ফিকহ সম্পর্কে পাণ্ডিত্য অর্জন করা সকলের উপর আবশ্যক না হলেও ফিকহের কতিপয় বিধান যা মানুষের জীবনে প্রতি মুহূর্তে প্রয়োজন তা শিক্ষা করা সকলের উপর ফরজ। যেমন : হালাল হারাম, পাক নাপাক, সালাত সাওম, হজ যাকাত, লেনদেন, ব্যবসায় বাণিজ্য ইত্যাদি বিষয় না জানলে মুমিনের জন্য ইসলামি জীবনযাপন করা আদৌ সম্ভব নয়। তাই ইসলামি জিন্দেগির জন্য এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।