উপস্থাপনা :
“Student life is the important period of human life.” উক্ত নীতির ভিত্তিতে একজন ছাত্র মানে একজন নাগরিক, একজন দেশপ্রেমিক, এ দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার। কেননা নিবিড় নিরলস জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে একজন ছাত্র তার জীবনকে তিলে তিলে গড়ে তোলে ভবিষ্যতের জন্য। দেশের ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত হয়ে জাতিকে দেয় দিকনির্দেশনা। এজন্য দেশ ও জাতি গঠনে ছাত্রদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
রাজনীতির সংজ্ঞা :
রাজনীতি বলতে বোঝায় দেশ বা রাষ্ট্র পরিচালনা বা তৎসংক্রান্ত অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নীতি বা নীতিমালা। জাতীয় পরিচয় এবং প্রতিষ্ঠার স্বার্থে রাজনীতি তার অজস্র প্রয়াস ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আর এই সূত্রে ছাত্রজীবন থেকেই প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর রাজনীতি সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞানলাভ প্রত্যাশিত ও বাঞ্ছনীয়।
আরও পড়ুন : রচনা- দেশ গঠনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা (২০ পয়েন্ট)
ছাত্র রাজনীতির অতীত গৌরব :
বাংলাদেশের গৌরবময় অতীত ছাত্র রাজনীতির উল্লেখযোগ্য প্রেক্ষাপটগুলো হলো ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৬২ সালের হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ৬৬ সালের স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন এবং ৬৯ *সালের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদের ভূমিকা। বলা যায়, পরবর্তীতে ছাত্র রাজনীতির সুফলই হলো আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ।
ছাত্র রাজনীতির মূল লক্ষ্য :
ছাত্র রাজনীতির মূল লক্ষ্য হলো দেশ ও জাতি গঠন। প্রত্যেক ছাত্রেরই জীবনের লক্ষ্য থাকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাহিত্যিক বা সমাজকর্মী হওয়ার। তারা পরবর্তীতে লক্ষ্যে পৌছে দেশ ও জাতি গঠন করে থাকে। তাই ছাত্রজীবন থেকেই দেশ ও জাতি গঠনকেই ছাত্র রাজনীতির মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করলে ছাত্র রাজনীতি দেশের জন্য সুফল বয়ে নিয়ে আসবে ।
বর্তমান ছাত্রজীবন ও রাজনীতির ধারা :
বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বের ছাত্রসমাজ আজ পঙ্কিল রাজনীতির দুষ্টবৃত্তে চোখবাধা কলুর বলদের মতো ঘুরপাক খাচ্ছে এবং নোংরা রাজনীতির ঘূর্ণাবর্তে পড়ে অসংখ্য ছাত্রের জীবন-তরণী অকালে ধ্বংস হচ্ছে। ছাত্রজীবন বিদ্যার্জনের শ্রেষ্ঠ সময়। অথচ রাজনীতিবিদরা হীন স্বার্থে প্রচলিত রাজনীতির সাথে ছাত্রদের জড়িত করে অসংখ্য ছাত্রের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে। বিদ্যার্জন ও রাজনীতি একসাথে কখনো করা যায় না। প্রতিটির জন্য পৃথক পৃথক সময় ও পরিবেশ রয়েছে। একসাথে করলেই তা ধ্বংস হবে এটাই বাস্তবতা ।
আরও পড়ুন : রচনা : ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য (২০ পয়েন্ট)-pdf
ছাত্র রাজনীতি ও সন্ত্রাস :
রাজনৈতিক দলগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় আজ দেশের শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসী তৎপরতা, অস্ত্রের ঝনঝনানি প্রতিনিয়ত লক্ষ করা যায়। হল দখল, টেহুার, চাঁদাবাজী, প্রতিপক্ষের ওপর হামলা যেন নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনীতির আদর্শে প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীই দেশপ্রেমিক। কিন্তু কতিপয় সন্ত্রাসী যুবকের উচ্ছৃঙ্খলতায় সমগ্র শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস আজ জাতির বিবেককে হত্যা করছে । তাই বলা যায়-
বইয়ের বদলে অস্ত্র নিয়ে
যারা শিক্ষাঙ্গনে যায়
জাতি কি আর তাদের কাছে ভালো কিছু পায়?
ছাত্রদের দায়িত্ব ও কর্তব্য :
বিদ্যার্জন করা ছাত্রদের প্রধানতম কর্তব্য। এছাড়াও চরিত্র গঠন, স্বাস্থ্য রক্ষা, নিয়মানুবর্তিতা, সংযম, সময়নিষ্ঠা, গুরুভক্তি প্রভৃতি শিক্ষাও ছাত্রদের বিশেষ কর্তব্য। ছাত্রদের নৈতিক দায়িত্ব নিজেকে, নিজের পরিবারকে, দেশ ও জনগণকে সুখী-সুন্দর করে গড়ে তোলা এবং সর্বোপরি আল্লাহর দুনিয়ায় আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করা । এছাড়াও ছাত্রদের অন্যান্য দায়িত্ব ও কর্তব্য নিম্নরূপ-
ক. সামাজিক উন্নয়ন : সামাজিক উন্নয়নে ছাত্রসমাজের গুরুত্ব অপরিসীম। একজন ছাত্রের জন্য নিজেকে গঠনের পাশাপাশি তার পরিবার, সমাজ ও দেশের কল্যাণে ভূমিকা রাখা অবশ্য কর্তব্য ।
খ. ইসলামি মূল্যবোধ : জাতি গঠনের জন্য দেশের মানুষকে ইসলামের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা অপরিহার্য। আর এ মহৎ দায়িত্ব ছাত্রসমাজই পালন করতে পারে। কেননা ছাত্রসমাজ ইসলামি জ্ঞানচর্চা ও সাধারণ জনগণের মাঝে তা প্রচার করে ইসলামি মূল্যবোধ সৃষ্টিতে সাহায্য করতে পারে ।
গ. রাজনৈতিক ক্ষেত্রে : জাতি গঠনের ক্ষেত্রে ছাত্র রাজনীতির কল্যাণমূলক ভূমিকাই আশাব্যঞ্জক। সুষ্ঠু ছাত্র রাজনীতিই জাতিকে সঠিক নেতৃত্ব উপহার দিতে পারে। আদর্শ ছাত্র রাজনীতি কখনো আত্মকেন্দ্রিক হয় না।
আরও পড়ুন : রচনা : গ্রামোন্নয়নের ছাত্রদের কর্তব্য
ঘ. অর্থনৈতিক উন্নয়নে : দেশের ভগ্ন অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে ছাত্রসমাজ বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। পুঁজিবাদি অর্থনীতির রসাতল থেকে মুক্তির মাধ্যমেই সঠিক জাতি গঠনের স্বরূপ উন্মোচিত হতে পারে ।
ঙ. শিক্ষা বিস্তার : নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে দেশের মানুষকে মুক্ত করার মহান দায়িত্ব ছাত্রদের। নিরক্ষর বয়স্ক লোক এবং বালক-বালিকাদের জন্য গ্রাম ও শহরের মহল্লায় জনগণের সহায়তায় নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন করে উচ্চশিক্ষিত ছাত্র-ছাত্রীরা বিনা পারিশ্রমিকে শিক্ষাদান করলে দেশের নিরক্ষরতা দূর হতে পারে ।
চ. পল্লি উন্নয়ন : ছাত্রসমাজ পল্লি উন্নয়নে বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে পারে। অবসর সময়ে বা ছুটিতে তারা অশিক্ষিত কৃষকদেরকে কৃষিজ্ঞান প্রদান, স্বাস্থ্য সচেতনতা ও শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে পল্লি উন্নয়ন করে দেশ গঠন করতে পারে।
ছ. ঐক্য ও সম্প্রীতি স্থাপন : ছাত্র সমাজকে সকল প্রকার সংকীর্ণতা পরিহার করে পারস্পরিক প্রীতি ও ঐক্য বজায় রাখতে হবে। ছাত্র সংগঠন ও সমিতি স্থাপনের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে ঐক্য ও সংহতির ভাব গড়ে তুলতে ছাত্রদের সম্মিলিত প্রয়াস একান্ত প্রয়োজন। এতে দেশ ও জাতি শক্তিশালী হবে।
জ. শিল্প ও সংস্কৃতির উন্নতি বিধান : ছাত্ররা পত্র-পত্রিকা, সভা-সমিতি ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের শিল্প ও সংস্কৃতিকে জাগিয়ে তুলতে পারে।
ঝ. দেশসেবা : দেশের দুরবস্থায় ছাত্র সমাজের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। বন্যা, মহামারী ও দুর্ভিক্ষের সময় দেশের নিপীড়িত মানুষের সেবায় তাদের আত্মনিয়োগ করতে হবে।
আরও পড়ুন : ছাত্র জীবন – বাংলা রচনা [ Class – 6, 7, 8 ,9 ,10]
ঞ. জনসাধারণকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা : জাতি গঠনে ছাত্র সমাজের প্রথম এবং প্রধান কর্তব্য হলো দেশবাসীকে দেশপ্রেম ও স্বার্থত্যাগে উদ্বুদ্ধ করা। তারা দেশের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে দেশবাসীকে সম্যক ধারণা দিয়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।
ছাত্রসমাজ অপরাজেয় শক্তি :
ছাত্ররা তারুণ্য ও যৌবনের প্রতীক। তারুণ্য আর নবযৌবনের কাছে সকল বাধার প্রাচীর বালির বাঁধের মতো উড়ে যায়। বাংলাদেশ আজ স্বাধীন কিন্তু এই স্বাধীনতার পেছনে সেই ‘৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ‘৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান এবং ‘৭১-এর মুক্তি সংগ্রামে ছাত্রসমাজই সবার আগে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, রক্ত দিয়েছে। ‘৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও ছাত্র সমাজের ভূমিকা ছিল অনন্য ।
উপসংহার :
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে উন্নতি ও সমৃদ্ধি আনয়নের জন্য এর সন্তানদেরকে অর্থাৎ দেশের ছাত্রসমাজকেই গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে। তরুণ ছাত্ররাই পারে দেশকে উন্নয়নের পথ দেখাতে এবং একটি সুখী ও সমৃদ্ধিশালী দেশ গড়তে ।
আরও পড়ুন : বাংলা প্রবন্ধ রচনা : যুদ্ধ নয় শান্তি চাই