হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

রচনা- দেশ গঠনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা(২০ পয়েন্ট)

উপস্থাপনা : 

একজন ছাত্র মানে একজন নাগরিক, একজন দেশপ্রেমিক ও দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার। জাতিকে যথার্থ শিক্ষিত করে তোলা, বেকারত্বের অবসান, জাতির সমৃদ্ধি ও বিশ্ব দরবারে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করতে ছাত্রশক্তি এক অনন্য উপাদান। এজন্যই দেশ ও জাতি গঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা অপরিসীম ।

ছাত্রদের ভূমিকার স্বরূপ : 

বিশ্বের যে কোনো দেশে ছাত্রসমাজ তাদের আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকেই নির্ধারণ করে তাদের দেশগঠনের কার্যক্রম। জাতিগঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা দুদিক থেকে বিবেচ্য। প্রথমত, ছাত্ররা নিজের জীবন গঠনে তৎপরতা দেখিয়ে ভবিষ্যতের জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। দ্বিতীয়ত, তারা প্রত্যক্ষভাবে জাতিগঠনের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে ।

আরও পড়ুন : রচনা: ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য (২০ পয়েন্ট)-pdf

ছাত্র সমাজের মূল লক্ষ্য দেশ ও জাতি গঠন : 

প্রত্যেক ছাত্রেরই জীবনের লক্ষ্য থাকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাহিত্যিক ইত্যাদি হওয়ার । তারা পরবর্তীতে লক্ষ্যে পৌঁছে দেশ ও জাতি গঠন করে থাকে। তাই ছাত্রজীবন থেকেই দেশ ও জাতি গঠনকে ছাত্রসমাজের মূল লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হলে বিশ্বের বুকে আমরা উন্নত জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব ।

শিক্ষা বিস্তারে : 

নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করার মহান দায়িত্ব ছাত্রদের। তারা নিরক্ষর বয়স্ক লোকদের এবং বালক-বালিকাদের জন্য গ্রামে ও শহরের মহল্লায় জনগণের সহায়তায় নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন করে উচ্চশিক্ষিত ছাত্রছাত্রী দ্বারা বিনা পারিশ্রমিকে শিক্ষাদান করে দেশের নিরক্ষরতা দূর করতে পারে।

পল্লী উন্নয়নে : 

পল্লী উন্নয়নে ছাত্রসমাজ বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে পারে। ছুটিতে বা অবসর সময়ে তারা অশিক্ষিত কৃষিজ্ঞান শিক্ষাদান, স্বাস্থ্য ও অধিকার সচেতনতা এবং শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে পল্লী উন্নয়নে দেশ গঠন করতে পারে । 

ঐক্য ও সম্প্রীতি স্থাপনে : 

ছাত্রসমাজকে সকল প্রকার সংকীর্ণতা পরিহার করে পারস্পরিক প্রীতি ও ঐক্য বজায় রাখতে হবে। ছাত্র সংগঠন ও সমিতি স্থাপনের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে ঐক্য ও সংহতির ভাব গড়ে তুলতে ছাত্রদের সম্মিলিত প্রয়াস একান্ত প্রয়োজন । এতে দেশ ও জাতি শক্তিশালী হবে।

আরও পড়ুন : রচনা: কর্মমুখী শিক্ষা / বৃত্তিমূলক শিক্ষা- রচনা (২০ পয়েন্ট)

শিল্প ও সংস্কৃতির উন্নতি বিধানে : 

ছাত্ররা পত্র-পত্রিকা, প্রচার পত্র বিতরণ, সভা-সমিতি ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের শিল্প ও সংস্কৃতিকে জাগিয়ে তুলতে পারে।

দেশ সেবায় : 

দেশের দূরবস্থায় ছাত্রসমাজের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। বন্যা, মহামারী ও দুর্ভিক্ষের সময় দেশের নিপীড়িত মানুষের সেবায় তাদের আত্মনিয়োগ করতে হবে।

জনগণকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধকরণ : 

দেশ গঠনে ছাত্রসমাজের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হলো দেশবাসীকে দেশপ্রেম ও স্বার্থত্যাগে উদ্বুদ্ধ করা। তারা দেশের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে দেশবাসীকে সম্যক ধারণা দিয়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।

দেশরক্ষায় : 

এ দেশের ছাত্রসমাজ মানে একটি নতুন দেশ ও নতুন জাতির কর্ণধার । ইংরেজ বিতাড়ন থেকে শুরু করে ‘৫২-এর ভাষা আন্দোলন ও সর্বশেষ ‘৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামে ছাত্রসমাজের বুকের রক্তদান, দেশরক্ষায় তাদের ভূমিকাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তাই অতীতের মতো বর্তমানে দেশ-জাতিকে রক্ষায় ছাত্রসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।

আরও পড়ুন :- ছাত্র জীবন – বাংলা রচনা [ Class – 6, 7, 8 ,9 ,10] 

জনমত গঠন : 

দেশ ও জাতির উন্নয়নে নানা কর্মকাণ্ডে জনমত গঠনে ছাত্রসমাজ বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। সভা-সমিতি ও নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ছাত্রসমাজ দেশের শিল্প ও সংস্কৃতিকে জাগিয়ে তুলতে পারে। জনগণের মধ্যে প্রীতি ও ঐক্য স্থাপন করে জাতিগঠনমূলক কাজে দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে জাতির মানস গঠনে সাহায্য করতে পারে। বিদেশি দ্রব্য বর্জন এবং স্বদেশি দ্রব্য ব্যবহার সম্পর্কে জনমত গঠনের প্রচারাভিযানে ছাত্রসমাজ অংশ নিতে পারে।

সামাজিক উন্নয়ন : 

সামাজিক উন্নয়নে ছাত্রসমাজের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। একজন ছাত্র নিজেকে গঠনের পাশাপাশি তার পরিবার তথা সমাজের মেহনতি গরিব-দুঃখী মানুষের বিশৃঙ্খল জীবনকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এলাকার ধ্বংসমুখী রাস্তা, কালভার্ট নির্মাণ ও সংস্কার এবং পানিবদ্ধতা সমস্যার সমাধানসহ সকল সমস্যার সমাধানে ছাত্রসমাজ অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। 

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ : 

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে দেশের অধিকাংশ মানুষ অসচেতন। ছাত্রসমাজ এ ক্ষেত্রে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে সবচেয়ে বেশি। কেননা, ছাত্রদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষ অত্যন্ত উঁচু ধারণা পোষণ করে। ফলে ছাত্রদের যে কোনো পরামর্শই তারা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ মনে করে থাকে।

আরও পড়ুন :  সময়ানুবর্তিতা / সময়ের মূল্য – রচনা (২০ পয়েন্ট )। PDF

সুতরাং, এ বিবেচনায় ছাত্রসমাজ নিজ নিজ এলাকার জনসাধারণকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞানদান ও জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। ফলে জনসংখ্যার অভিশাপ থেকে দেশ হতে পারে সম্পূর্ণ মুক্ত।

নৈতিক অবক্ষয় রোধ ও রাষ্ট্রীয় কাজে সহযোগিতা : 

ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজের বহু অন্যায় উচ্ছেদ করে এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। অতীত ইতিহাসে এর একাধিক দৃষ্টান্ত আছে। আর আজকের ছাত্রই আগামী দিনের রাষ্ট্র পরিচালনার এক একটি অংশ। সুতরাং, ছাত্ররা যদি ঘুষ-দুর্নীতিসহ সকল প্রকার নৈতিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় এবং নিজেরাও সততার অনুশীলন করে, তা হলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ হতে পারে দুর্নীতিমুক্ত সমৃদ্ধ দেশ।

সন্ত্রাস নির্মূলকরণ : 

শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস আজ দেশ গড়ার পথে এক মারাত্মক অন্তরায় হয়ে আছে। সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ আজ বিনষ্ট হতে চলেছে। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস নির্মূলে সরকারি উদ্যোগ যেমন প্রয়োজন, ততোধিক প্রয়োজন ছাত্রসমাজের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা।

বেকারত্ব নিরসন : 

কর্মসংস্থানের অভাব বা বেকারত্ব বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে এক বড় সমস্যা। ছাত্রসমাজ যদি নিজেরাই নিজেদের কর্মসংস্থানের পন্থা উদ্ভাবন করতে পারে, তা হলে বেকারত্বের অভিশাপ অনেকখানি দূর হবে।

আরও পড়ুন : অধ্যবসায় – রচনা : ২০, ২৫, ৩০পয়েন্ট – pdf

কৃষিক্ষেত্রে : 

উচ্চশিক্ষিত হলে কৃষিকাজ করা যাবে না, এমন প্রাচীন ধারণা ত্যাগ করা গেলে ছাত্রসমাজ উৎপাদন কর্মকাণ্ডে রাখতে পারে বিপুল অবদান। যেমন— কৃষি, মৎস্য চাষ, পশু, হাঁসমুরগির খামার, বাগান করা, গাছপালা রোপণ ইত্যাদি আর্থিক উন্নয়নমূলক কাজে তথা আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে ছাত্রসমাজই দেশকে গড়ে তুলতে সক্ষম।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ছাত্রসমাজের দায়িত্ব : 

জাতি গঠনে ছাত্র রাজনীতির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বের দাবিদার। ছাত্র রাজনীতিই জাতিকে সঠিক নেতৃত্ব উপহার দিতে পারে। কারণ আদর্শ ছাত্র রাজনীতি কখনো আত্মকেন্দ্রিক হয় না।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন : 

দেশের ভগ্ন অর্থনীতি পুনর্গঠনে ছাত্রসমাজ বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। সৎ ও দক্ষ ছাত্ররা সংগঠিত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুঁজি বিনিয়োগ করে লেখাপড়ার পাশাপাশি যৌথ ব্যবসায়-কারবার করার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সাধন করতে পারে।

উপসংহার : 

দেশ গঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা অনেক। তাই বিপথগামিতা এবং ধ্বংসাত্মক ক্রিয়াকলাপ থেকে ছাত্রসমাজকে মুক্ত থেকে দেশ ও জাতিগঠনমূলক কাজে এগিয়ে আসতে হবে। এতে দেশের প্রগতি আসবে- সমৃদ্ধির সূচনা হবে। তাদের কর্মপ্রেরণার দ্বারাই নির্মিত হবে দেশের প্রগতির ধারা ।

4 thoughts on “রচনা- দেশ গঠনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা(২০ পয়েন্ট)”

Leave a Comment